25 Nov 2024, 12:35 am

নির্বাচন পদ্ধতির ওপর আস্থা হারিয়েছে জনগণ : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘খুব একটা অংশগ্রহণমূলক’ উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। এ সময় অন্যান্য কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমার ভোট কি আমি দিতে পারব? ভোট দিলে কী এটা ওখানেই পড়বে, না কি ফিরে এসে এক জায়গায়ই পড়বে। এমন বিভিন্ন ধরনের অবান্তর, কিন্তু আমি অবান্তর বলছি না, তাদের আস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই ধরনের অবান্তর যুক্তির অবতারণা করছে। জনগণ আস্থা হারিয়েছে। আমি বলব, নির্বাচনব্যবস্থার ওপরে জনগণের আস্থা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতিতে যদি আরো বেশি সংস্কার আনা যায়, যেখানে দৃশ্যমানভাবে আরো বেশি সচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলে হয়তো আগামী নির্বাচনগুলো জনগণের কাছে আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় জাতিসংকট থেকে রেহাই পেয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘অনেকেই সুনাম করেছেন, প্রশংসা করেছেন আবার অনেকে অপবাদ বা বদনাম করেছেন। দুটিকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটি মনে করি, নির্বাচনটা সুসম্পন্ন হয়েছে। মহাসুসম্পন্ন বলব না, সুসম্পন্ন হয়েছে। একটা চলমান সংকট যেটাতে শঙ্কা, উদ্বেগ ছিল, সেটা থেকে জাতি উঠে এসেছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের যদি আমাদের প্রতি আস্থা না থাকে, আস্থা যদি চরম মাত্রায় চলে যায়। তাহলে নির্বাচন কমিশনেরও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কিন্তু রাজনৈতিক সংকট নিরসন আমাদের কাজ নয়।

রাজনীতিবিদদের যদি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নয়। নির্বাচন মোটা দাগে সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে গ্রহণযোগ্য না হলে একটা রাজনৈতিক সংকট থেকে যায়। একটা অংশ শুধু নির্বাচন বর্জন করেনি, প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেয়। সেদিন থেকে সংকট শুরু। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তবে সবার সমন্বিত প্রয়াসে নির্বাচন উঠিয়ে আনা হয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও জাতি স্বস্তিবোধ করেছে। নির্বাচন কমিশনও স্বস্তিবোধ করেছে।

এই নির্বাচনটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি :সিইসি বলেন, কোনো নির্বাচনই কিন্তু বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এবারকার যে নির্বাচনটা নিয়ে খুব সন্তুষ্ট বোধ করছি, হয়তোবা আমরা। আবার বলতে হবে এই নির্বাচনটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি। বিতর্কটা আছে কমবেশি, তবে যেটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ব্যাপক অনিয়ম ইত্যাদি হবে। যেই জিনিসটাকে উতরে নির্বাচনটাকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সফল, গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি আমাদের নির্বাচনে আমি আগেও বলেছি যে, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা, রাষ্ট্র, বিভিন্ন সংগঠন আমাদের নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। তারাও নির্বাচন বিষয়ে বিভিন্ন গাইডলাইনস দিচ্ছিলেন এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে হবে, এই ধরনের একটা ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন।

সরকারের সঙ্গে গোপন এজেন্ডা নেই: টিআইবির প্রতিবেদনের কথা সরাসরি উল্লেখ না করে সিইসি বলেন, ‘এখনো পত্রপত্রিকায় সমালোচনা হচ্ছে। আজও (বৃহস্পতিবার) যখন পত্রিকায় পড়ছিলাম একটি সংস্থা থেকে বলছে যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের একটা গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। আমি এখনো জানি না সরকারের সঙ্গে আসলে কোনো গোপন এজেন্ডা আছে কি না? আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমার সঙ্গে হয়নি। কারো সঙ্গে হয়েছে কি না আমি জানি না। কোথায় গোপন এজেন্ডাটা হলো? কোন গোপন এজেন্ডাটা আমরা বাস্তবায়ন করেছি? সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ওজুহাত কীভাবে নিলাম? তাহলে কি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল না? রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি, এজন্য চাইলে কি ৩০ বছর নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যেত? এই সাংবিধানিক ম্যান্ডেট কী আমাদের আছে?’

এটি স্থায়ী সমাধান নয়: সিইসির মতে, উদ্বেগ ও সংকট থেকে জাতি ওঠে এসেছে ঠিকই। তবে এটা স্থায়ী সমাধান নয়। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের যদি আস্থা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। নির্বাচন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পর যদি সংকট সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও প্রয়োজন হবে একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা। নিজেদের মেয়াদ শেষ হলেও সামনের কমিশনকে বিতর্কমুক্ত রাখতে এই ধরনের পদ্ধতির সংকট নিরসনের আহ্বান জানান তিনি।

বিভিন্ন চাপে থেকেও নির্বাচন কমিশন ভোট সুষ্ঠু করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, তো আমরা বিভিন্ন ত্রিমুখী চাপে আমাদের নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করার জন্য আরো বেশি সচেষ্ট হয়েছি এবং পরিশেষে যেটা আমার প্রিয় সহকর্মীরা বলেছেন যে, সবার সহযোগিতা নিয়ে, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা সম্ভব হয় না এবং এটা সংবিধানে, আইনেও বলে দেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ইমানের সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছি। যে স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছেছি, সে স্ট্যান্ডার্ড থেকে নামতে পারব না। আমরা দেখিয়ে দেব, কীভাবে এই কমিশন কাজ করে, যা ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা একটা ভালো নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। না করতে পারলে হয়তো আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতাম। আমাদের সরকার সহায়তা দিয়েছে। না হলে এক সুরে এককভাবে কাজ করা সম্ভব হতো না। আশা করি, মানসম্মানের সঙ্গে চলে যেতে পারব।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, দলগুলো যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা এবং সরকার, সবাই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। আনসার থেকে শুরু করে সবাই সহায়তা করেছে। সরকার একটি বিরাট শক্তি, তাদের সহযোগিতা যদি না পেতাম, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারতাম না। তবে সব দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরো গ্রহণযোগ্য হতো।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে ছিলাম যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে না পারলে, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। ভোট পড়ার হারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাড়ে ৩টায় যদি শেষ ব্রিফ করতেন, তাহলে তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি হতো না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14343
  • Total Visits: 1297798
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১২:৩৫

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018